নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লা এলাকায় এক ব্যাক্তি বৈদ্যুুতিক ট্রান্সফর্মারের একেবারে পাশ ঘেষেই তুলেছেন দোতলা মার্কেট। যেখানে থাকবে চারটি দোকান। বিদ্যুৎ অফিস বলছে, ট্রান্সফর্মার থেকে সড়িয়ে ভবন নির্মাণের জন্য মোক্তার হোসেন নামের এই মার্কেটের মালিককে বলা হলেও তিনি বিদ্যুৎ অফিসের কথা গুরুত্ব দেননি। ফলে ঝুঁকিপূর্ন এ মার্কেটে যেকোনো সময় দূর্ঘটনার আশংকা থেকে যাচ্ছে। উল্লেখ্য এ পশ্চিম তল্লা এলাকায়ই গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর একটি মসজিদে গ্যাসের লিকেজ ও ত্রুটিপূর্ন বৈদ্যুতিক লাইন থেকে আগুন লেগে চৌত্রিশজনের মৃত্যু হয়।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার তল্লা বড় মসজিদ থেকে অল্প দূরে তিন রাস্তার মোড়ে একটি ট্রান্সফর্মার। সম্প্রতি ট্রান্সফর্মার ঘেষেই একটি দ্বিতল মার্কেট নির্মাণ শুরু করেন এ এলাকারই বাসিন্দা মোক্তার হোসেন। নির্মাণের কাজ এখনো চলছে। মার্কেটের নিচের অংশে দুইটি দোকান। ও উপরের অংশে দুইটি দোকান থাকবে বলে বলে জানান নির্মাণ শ্রমিকেরা। মার্কেটের দ্বিতীয় তলার প্রায় গাঁ ঘেষেই এই ট্রান্সফর্মার ও হাই ভোল্টেজের তার। দ্বিতীয় তলায় ওঠার কোনো সিড়ি নেই।
নির্মাণকাজে থাকা ওস্তাগার সালাম জানান, তারা মার্কেটের সামনের অংশে মাচা বেঁধে দোতলায় যাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এদিক দিয়েই লোহার সিঁড়ি হবে।
সামনে দিয়ে লোহার সিড়ি হলে হাই ভোল্টেজের তারের খুব কাছ দিয়েই ওঠা নামা করতে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ মহল্লার স্থায়ী বাসিন্দা একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানান, এ ট্রান্সফর্মার ও এর অল্প দূরে আরো একটি ট্রান্সফর্মার বসানো হয়েছে প্রায় পনের বছর আগে। ট্রান্সফর্মারের কারনে কেউ খুটির পাশের জায়গা কিনতে চাচ্ছিলো না। ছয় বছর আগে মোক্তার এ জায়গা কিনে। বিদ্যুতের খুটির সামনে দিয়ে দেয়াল দিয়ে খুঁটির জায়গাসহ আরো কিছু জায়গা নিজের দাবী করে ট্রান্সফর্মার সড়ানোর জন্য পরিচিতি এক বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে। কিন্তু পাশে আর কোনো জায়গা না থাকায় বিদ্যুৎ অফিস এটি সড়িয়ে নেয়নি। এর মধ্যে প্রায় দেড় মাস ধরে সে ট্রান্সফর্মার ঘেষেই এ মার্কেট নির্মাণ করছে। এ মার্কেটে যারাই দোকান নিক ট্রান্সফর্মার ও হাই ভোল্টেজের বৈদ্যুতিক লাইনের জন্য এখানে মারাত্মক দূর্ঘটনা ঘটার আশংকা থেকে যায়।
বিষয়টি সম্পর্কে ডিপিডিসি’র নারায়ণগঞ্জ (পূর্ব) জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোর্শেদ জানান, ট্রান্সফর্মারের সাথে যেভাবে মোক্তার হোসেন মার্কেট নির্মাণ করছেন তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ন। যেকোনো সময় এখানে বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাকে এ ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে এবং নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ভবন নির্মাণ করতে আমরা একাধিক চিঠি দিয়েছি। কিন্তু তিনি শুনছেন না।
অভিযোগের ব্যাপারে মোক্তার হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘জায়গা আমার। আমার জায়গায় আমি মার্কেট নির্মাণ করছি। এখানে ডিপিডিসি অবৈধভাবে ট্রান্সফর্মার বসিয়েছে।’
ট্রান্সফর্মার তার জায়গা কেনার বেশ কয়েক বছর আগে বসানো হয়েছে জানানো হলে তিনি জানান, ‘যখন জায়গা খালি ছিলো তখন বসিয়েছে। এখন জায়গা আমি খালি রাখবো না।’ তিনি জানান, ‘এই ট্রান্সফর্মার ও আমার বাড়ির পেছনে আমার সীমানা দেয়ালের উপরে আরেকটি ট্রান্সফর্মার রয়েছে – এ দুইটি ট্রান্সফর্মার সড়ানোর জন্য ডিপিডিসিকে দু-একদিনের মধ্যে চিঠি দেবো।’ ডিপিডিসি’র দেয়া চিঠি তিনি পাননি বলেও দাবী করেন। ভবনের সিড়ির ব্যাপারে তিনি বলেন, এখন ভবনে কোনো সিড়ি থাকবেনা। পরে ভবনের উত্তর দিক দিয়ে আমি সিড়ি নির্মাণ করবো।
নির্মাণাধীন এ মার্কেটের কয়েক শ’ গজের মধ্যেই পশ্চিম তল্লা এলাকার বায়তুস সালাত জামে মসজিদটি। যেখানে গত ২০২০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর গ্যাসের লিকেজ ও ত্রুটিপূর্ন বৈদ্যুতিক লাইন থেকে আগুন লেগে চৌত্রিশজনের মৃত্যু হয়। অবহেলা আর দূর্নীতির কারনে সেখানে এ প্রাণহানীর ঘটনা ঘটে মসজিদের আগুনের ঘটনার পরে বলে বিভিন্ন পক্ষ থেকে মন্তব্য করা হয়।
Leave a Reply