নারাযণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে লঞ্চ ডুবির ঘটনায় আরও ৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় এ নিয়ে মোট ৩৪ জনের লাশ পাওয়া গেলো। ঘটনা তদন্তে বিআইডব্লিউটিএ একটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তার সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেবে। আগামী ৮ এপ্রিল দূর্ঘটনাস্থলে তারা শুনানীর জন্য ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের আত্মীয়স্বজন ও উদ্ধার প্রাপ্তদের আসার অনুরোধ জানিয়েছে। এ নিয়ে এ ঘটনায় মোট তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো।
মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নদীর সৈয়দপুর থেকে শাহ সিমেন্ট পর্যন্ত এলাকায় পর্যায়ক্রমে পাঁচটি লাশ ভেসে উঠলে নৌ পুলিশ লাশ গুলো উদ্ধার করে। নারায়ণগঞ্জ নৌ পুলিশের এসআই ইউনুস ৫ জনের লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পরে লাশ গুলো নিহতদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা বারিক। মঙ্গলবার আরও ৫ জনের লাশ উদ্ধার হওয়ায় লঞ্চ ডুবির ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৩৪-এ।
যে ৫ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে তারা হলেন, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থায় কর্মরত মুন্সীগঞ্জ সদরের মতিউর রহমান কাজীর ছেলে মোঃ ইউসুফ কাজী (৫২), লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহত সুনিতা সাহার ছোট ছেলে আকাশ সাহা অনিক (১২), ঢাকার মীরপুর-১১ এর সিরাজ হাওলাদারের ছেলে সোহাগ হাওলাদার (২৫), লক্ষীপুর জেলার পাঁচপাড়ার নুরুল আমিনের ছেলে তানভীর হোসেন হৃদয় (১৬) এবং মুন্সীগঞ্জ সদরের মালপাড়া এলাকার সিরাজ মিয়ার ছেলে মোঃ রিজভী (২১)।
বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের উপ পরিচালক (ট্রাফিক) বাবুল লাল বৈদ্য বাদি হয়ে মামলার এজাহার প্রস্তুত করলেও সেটি থানায় জমা দেয়া হয়নি। গতকাল বিকেলে তিনি সময়ের আলোকে জানান, এজাহার প্রস্তুত করা হয়েছে। তিনি নৌ থানার কর্মকর্তাদের নিয়ে বন্দর থানায় যাবেন এজাহার জমা দিতে। তারা এজাহার জমা না নিলে পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে তারা যে থানায় এজাহার দিতে বলবেন সেই থানায় এজাহার দায়ের করা হবে।
বিআইডব্লিউটিএ’র এই কর্মকর্তা আরও বলেন, দূর্ঘটনার জন্য দায়ী কার্গো জাহাজটিকে সনাক্ত করা সম্ভব না হওয়ায় মামলায় অজ্ঞাত কার্গোকে দায়ী করে এজাহার লেখা হয়েছে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ নৌ থানার এএসআই জহির বলেন, ঘটনাস্থল বন্দর থানার অন্তর্গত হওয়ায় এজাহার বন্দর থানায় দায়ের হবে। তবে এই মতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বন্দর থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, ঘটনার পর বন্দর ও নারায়ণগঞ্জ উপজেলার দুই নির্বাহী কর্মকর্তাসহ নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা রুজু হবে বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। আমি সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে পারবো না।
গত রোববার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সীগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার মাত্র ১৫ মিনিট পর শীতলক্ষ্যা নদীর কয়লা ঘাট এলাকায় এসকে-৩ নামের একটি কার্গো জাহাজ পেছন থেকে ধাক্কা দিলে এমএল সাবিত আল হাসান নামের লঞ্চটি ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া লঞ্চের কিছু যাত্রী ঘটনার সময় নদীতে লাফিয়ে পড়ে জীবন বাঁচায়। ঘটনার রাতে ৫ জন, ঘটনার পরদিন সোমবার ২৪ জন এবং গতকাল মঙ্গলবার আরও ৫ জনসহ মোট ৩৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
Leave a Reply