কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে নারীসহ একটি কক্ষে অবস্থানকালে যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতারা অবরুদ্ধ করে। মাওলানা মামুনুল হক দাবি করেন, ওই নারী তার ২য় স্ত্রী। ওই সময় এ মাওলানা শাররিক হেনাস্থার শিকার হন।
সোনারগাঁ রয়েল রিসোর্টের ৫ম তালার ৫০১ নম্বর কক্ষে শনিবার (৩ এপ্রিল) বিকালে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার খবর পেয়ে ওই হেফাজত নেতাকে উদ্ধার করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের অন্যান্য নেতারাও খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব ও প্রয়াত শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের ছেলে মাওলানা মামুনুল হক। সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যকে মূর্তি আখ্যা দিয়ে এর স্থাপনের বিরোধিতা করে আলোচনায় আসেন। এরপর সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মুদির সফর বাতিলের দাবীতে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন ও হরতালে বেশ গুরুত্তপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
সোনারগাঁ থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) সাইদুজ্জামান জানান, হেফাজত নেতা মামুনুল হক ওই নারীকে দ্বিতীয় স্ত্রী দাবী করছেন। এখানে আমাদের এডিশনাল এসপি মোশারফ স্যার আছেন। তিনি হেফাজত নেতা মামুনুল হকের সাথে কথা বলছেন।
এদিকে মামুনুল হককে হোটেল কক্ষে অবরুদ্ধ করার সময়ে তার সাথে কথা বলার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
সেখানে দেখা যায়, রয়্যাল রিসোর্টের একটি কক্ষে মামুনুল হককে ঘিরে রেখেছেন বেশ কয়েকজন। তারা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে একজন নারীকে নিয়ে ওই রিসোর্টে অবস্থান করার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তবে মামুনুল হক তাদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, সঙ্গে থাকা নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। নাম আমিনা তৈয়বা। দুই বছর আগে বিয়ে করে ছিলেন। তাকে নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছেন। তবে তিনি যে এখানে এসেছেন, সেটি হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা জানেন না।
অপর দিকে, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের অবরুদ্ধের খবর ছড়িয়ে পড়লে সন্ধ্যার পর কয়েকশ মানুষ সোনারগাঁ উপজেলার রয়েল রিসোর্টটির সামনে এসে জড়ো হয়। এ সময় ওই রিসোর্টে ব্যাপক ভাংচুর চালায় হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থকরা।
এতে রিসোর্টের মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুল ইসলাম, এসিল্যান্ড গোলাম মোস্তফা মুন্না, নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) টি আই মোশাররফ হোসেন, সোনারগাঁ থানার ওসি (তদন্ত) তবিদুর রহমানসহ অর্ধশতাধিক সাংবাদিক।
এক পর্যায়ে মাওলানা মামুনুল হকসহ ওই নারীকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় বিক্ষুব্ধ হেফাজত কর্মীরা। পরে স্থানীয় একটি মসজিদে নিয়ে যাওয়া হয়। এক পর্যায়ে অবরোধ করেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। পুলিশের দুটি গাড়ি ও অন্তত দুটি বাস ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে সোনারগাঁও উপজেলার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, ‘হুজুর (মামুনুল) ঢাকায় চলে যাচ্ছেন। আপনারা সবাই শান্ত হয়ে যার যার বাড়িতে ফিরে যান।’ এমন ঘোষণার পর পরিবেশ একটু শান্ত হয়েছে।
মামুনুল যে নারীর সঙ্গে ওই রিসোর্টে যান, তাকে জিজ্ঞাসাবাদের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে ওই নারী জানান, তার নাম জান্নাত আরা। গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায়। তিনি মামুনুলের দ্বিতীয় স্ত্রী।
মামুনুলের আগের স্ত্রীর চার ছেলে আছে। তবে দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করা জান্নাত জানান, তাদের ঘরে কোনো সন্তান নেই। তার বাসা ঢাকার মোহাম্মদপুরে। রিসোর্টটিতে গিয়েছিলেন দুপুরের পর।
রিসোর্টে কেন এসেছেন, এমন প্রশ্নে সেই জান্নাত বলেন, ‘মানুষ কি বাসায় সবাই সব সময় রেস্ট করে? দেশের বাইরেও তো যায়। আমরাও রেস্ট করতে এসেছিলাম।’
সোনারগায়ের যুবলীগের নেতাদের দাবি, মাওলানা মামুনুলের দেয়া তথ্য ও দাবিকৃত ২য় স্ত্রীর দেয়া তথ্যে অমিল। তাদের তথ্য গড়মিলে প্রমান হয় তারা স্বামী স্ত্রী নয়।
এদিকে, রাতে ৭১ টিভির চ্যানেলে প্রচারিত সংবাদে বলা হয়, ‘তাদের হাতে একটি ফোনালাপ আসছে’।
মাওলানা মামুনুল হক বলছেন, সাথে যে মহিলা ছিল, সে জাফর শহীদুল ইসলাম ভাইয়ের স্ত্রী। পরিস্থিতির কারণে তিনি ওই নারীকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিতে বাধ্য হয়েছেন। তবে, কেউ তোমাকে প্রশ্ন করলে তুমি বইলো সব জানো।
Leave a Reply