পরকীয়ায় মশগুল স্ত্রী। বাধ সাধায় স্বামীকে চিরতরে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা। প্রেমিক ও তার বন্ধুর সঙ্গে গোপন বৈঠকে স্বামীকে হত্যার সিদ্ধান্ত। পরিকল্পনা মাফিক পিস্তল তাক করেন স্ত্রীর প্রেমিক।
গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় তাকে কুপিয়ে জখম করে প্রেমিকের বন্ধু। গ্রেপ্তার করা হয় স্ত্রী ও তার প্রেমিকের বন্ধুকে। প্রতিশোধ নিতে ফের হত্যার মিশনে গিয়ে ধরা পড়ে প্রেমিকও। পুলিশের তদন্তে স্বামী জানতে পারেন তার হত্যাচেষ্টায় জড়িত তারই স্ত্রী।
কলেজে পড়ার সময় সম্পর্কে জড়ান ইফতেখায়রুল আলম রাজু ও জামিলা আক্তার অর্পা। দু’বছরের প্রেম পরিণতি পায় দু’হাজার আটে, পরের বছর বাবা-মা হন দু’জন।
রাজু-অর্পার যৌথ জীবনের এক যুগ পর তৃতীয় জনের অনুপ্রবেশ। রেস্তোরাঁর বেয়ারা তানভীর আহমেদ তন্ময়ের সঙ্গে অর্পার পরিচয় ভার্চুয়াল জগতে। অল্পদিনেই গড়ে ওঠে গভীর সম্পর্ক। তাদের গোপন অভিসার জেনে যান অর্পার স্বামী রাজু। দু’জনের সংসার হয়ে ওঠে কুরুক্ষেত্র।
ধানমন্ডি হ্রদে গোপন বৈঠকে অর্পা, তন্ময় ও তার বন্ধু রেস্তোরাঁর বেয়ারা নূরে আলম হোসেন নূর।রাজুকে খুনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত। পিস্তল কিনতে নিজের গয়না বেচে প্রেমিক তন্ময়কে চল্লিশ হাজার টাকা দেন অর্পা। আর মিশন সফল হলে এক লাখ টাকা ও রাজুর মোটরসাইকেল পাবেন নূর।
রাজু হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি তানভীর আহমেদ তন্ময় বলেন,’তিনজন বসছে। তারা সিদ্ধান্ত নেয় কিভাবে কী করতে হবে। অর্পা ও নূর সিদ্ধান্ত নেয় তাকে জাস্ট একটা ভয় দেখানোর।’
পরিকল্পনার দু’সপ্তাহ পর এ বছরের পহেলা জানুয়ারি ঢাকার দক্ষিণ বনশ্রীতে রাজুর বাড়িতে মুখোশ পরা তন্ময় ও নূর। মোবাইল ফোনে স্বামীর বের হওয়ার খবর জানান অর্পা। রাজুকে লক্ষ্য করে দুটি গুলি ছোড়ে তন্ময়। লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় ছুরি দিয়ে কোপায় নূর।
রাজুর ভাই মঞ্জুরুল আলম জানান,’একজন গেট খোলা পেয়ে ঢুকে ভাইয়াকে সিঁড়িতে উঠে ফায়ার করে। তার গায়ে কোন গুলি লাগেনি। ছুরি মেরেছিলো। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।’
খিলগাঁও থানায় মামলা হওয়ার পর তদন্তে নামে গোয়েন্দা পুলিশ। ধরা পড়েন অর্পা ও তার প্রেমিকের বন্ধু নূর। প্রতিশোধ নিতে তিন দিন আগে প্রেমিকার স্বামীকে ফের খুন করতে গিয়ে ধরা পড়েন তন্ময়ও। উদ্ধার হয় পিস্তল ও গুলি।
ঢাকা মহানগর পুলিশ গোয়েন্দা বিভাগ (মতিঝিল) উপ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান জানান,’অর্পা ও তন্ময়ে সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। রাজু জানতে পারা পর অর্পাকে বিভিন্নভাবে নিষেধ করে। সে অর্পাকে মারধরও করে। অর্পা সেগুলো ভিডিও করে তন্ময়কে দেখাতো, এটি থেকেই অর্পা এবং তন্ময়ের মধ্যে ক্ষোভ জন্ম নেয়। তারা পরিকল্পনা করে তাকে মেরে ফেলার।’
আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন অর্পা ও তার প্রেমিকের বন্ধু নূর। তদন্তের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, নৈতিক অবক্ষয়ে পরিবারের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম,’পরকীয়ার কারণে নিজের স্বামীকে মেরে ফেলার যে পরিকল্পনা, এই অপরাধ প্রবনতা নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ। পরিবারের মাঝে এভাবেই অনেক ঘটনা ঘটছে। অনেকগুলো অপরাধ সামাজিক অবক্ষয়ের কারণেই হচ্ছে। বিষয়গুলো নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। বিষয়গুলো সামাজিকভাবেই কারেকশন দরকার।’
গ্রেপ্তারের কিছুদিন আগে রাজুকে তালাক দেন অর্পা । তারপর বারো বছরের মেয়েকে নিয়ে চলে যান কুমিল্লায় তন্ময়ের বাড়িতে। (সুত্র: ডিবিসি নিউজ)
Leave a Reply