নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর পরিবার থেকে দেওভোগস্থ জিউস পুকুর দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষার দাবীতে গণসমাবেশ করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা হিন্দু সম্প্রদায়। শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারী) দুপুর ২টা থেকে দেওভোগ জিউস পুকুরের পাড়ে এই গণ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিলো। চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।
গণসমাবেশে দেবোত্তর সম্পত্তি জিউস পুকুর রক্ষার দাবীতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আয়োজন হলেও সংহতি প্রকাশ করে সমাবেশে উপস্থিত হয়েছিল মুসলমানসহ বৌদ্ধ, খিস্ট্রান ধর্মের অন্যান্য নেতা-কর্মী ও সাধারন লোকজনও। তাদের শ্লোগানে শ্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠে জিউস পুকুর পাড়। দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষা, খোকন সাহার নামে মামলাসহ নানা বিষয়ে প্রতিবাদি কন্ঠ উচ্চারিত হতে থাকে।
গণসমাবেশে প্রধান অতিথি নিম ডা. নিম চন্দ্র ভৌমিক বলেন, মন্দিরের সেবায়েত নিজে বলেছেন, এই পুকুর সাড়ে ৩শ’ বছর আগে এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি। আর এই সম্পত্তিতে ‘যে দলিলই হোক না কেনো, সেটি অবৈধ’। কাজেই আমি বলবো আজ এখানে যারা আন্দোলন করছে, এটা ন্যায় যৌক্তিক আন্দোলন। আমরা অতীতেও অনেক দেবোত্তর সম্পত্তি আন্দোলন করে রক্ষা করেছি। অনেকেই প্রতিহত করার চেষ্টা করেছিলো, কিন্তু সফল হয়নি আর হবেও না। গণতন্ত্রের প্রধান লক্ষ্য হলো আইনের শাসন, যেখানে ধর্ম নির্বিশেষে সবার সমান অধিকার থাকবে। মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে বলবো আপনার যদি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা থাকে, তাহলে এই দেবোত্তর সম্পত্তি ছেড়ে দিবেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. আবু হাসনাত মো. শহিদ বাদল বলেন, ‘আমার বন্ধু খোকন সাহাকে নিয়ে যদি কেউ বারাবারি করে, তাহলে পুরো নারায়ণগঞ্জে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলবে। ওই আগুনে ছার খার হবেন আপনি (মেয়র আইভী)। এই বাংলা হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ খিস্ট্রান সবার; এই কথাটি যেমন সত্য তার চেয়ে বড় সত্য আমরা সবাই বাঙ্গালি। পাইছেন কি আপনে? আপনি একদিকে বলতাছেন, ডিআইটি মসজিদ উঠায় দিবেন আর একদিকে দেবোত্তর সম্পত্তি দখল করবেন। তা হবে না। ও ভাই হিন্দু, মুসলমান আমরা কি আছি? আমাদের শরিরে যেত দিন এক ফোটা রক্তও থাকবে ততদিন আমরা এই দেবোত্তর সম্পত্তি নিতে দেবো না।
৬টি দলিলের বরাদ দিয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা বলেন, দেবোত্তর ক্রয় বিক্রয় না করা গেলেও ১৯৭৯ সালের ২২ আগষ্ট মেয়র আইভীর নানা মাহাতাব উদ্দিনের নামে ৫৭ শতাংশ, আইভীর মা মমতাজ বেগমের নামে ৬০ শতাংশ জমি, আইভীর দুই ভাই উজ্জ্বল ও রিপনের নামে ৬০ শতাংশ, আইভীর চাচী সাহারা খাতুন ও আইভীর তিন মামার নামে জমি ক্রয়ের দলিল পাওয়া গেছে। উনি প্রমান দিতে বলেছিলেন। তাই দেবত্তোর সম্পত্তি দখলের চেষ্টার অভিযোগ আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। এসময় তিনি অনেক গুলি দলিল হাতে ধরে উচু করে সবাইকে দেখান।
বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খিস্ট্রান ঐক্য পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি দীপক কুমার সাহার সভাপতিত্বে গণসমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন, প্রধান অতিথি বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. নিম চন্দ্র ভৌমিক, প্রধান বক্তা বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রী নির্মল চ্যাটার্জী, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল(ভিপি বাদল), নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড খোকন সাহা, নারায়ণগঞ্জ জেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি চন্দন শীল, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবলীগের সভাপতি সাহাদাত হোসেন ভুইয়াঁ সাজনু, নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের মভাপতি মো. জুয়েল হোসেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড মুহাম্মদ মোহসীন মিয়া,মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ্ নিজাম, ১৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধান, ১৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজল, ১৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাফায়েত আলম সানিসহ অনেকে।
Leave a Reply