নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান “পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়”এর বাৎসরিক আয় সম্পর্কে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সাবেক অভিভাবক সদস্য, পাগলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও আসন্ন পাগলা বাজার সমিতির নির্বাচনে সভাপতি পদপ্রার্থী জাহের মোল্লার বিরুদ্ধে অসত্য, বায়োয়াট, বিভ্রান্তিমুলক এবং মনগড়া তথ্য সামাজিক যোগাযোগ ‘ফেসবুক’ এ প্রচার করার অভিযোগ করেছেন ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য এবং বর্তমান এডহক কমিটির অভিভাবক সদস্য মোঃ রেজাউল করিম।
১১ জুন রবিবার সকাল ৯ টার দিকে পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে এডহক কমিটির সদস্য সচিব এবং প্রধান শিক্ষক ব্রোজেন্দ্র নাথ সরকার, ম্যানেজিং কমিটির সাবেক কয়েকজন সদস্য, ২ শত অভিভাবকের উপস্থিতিতে এই সংবাদ সম্মেলন করেন রেজাউল করিম। এসময় তিনি বিদ্যালয়ের আয়, শিক্ষক ও ৪ র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বেতন না দেয়া নিয়ে জাহের মোল্লার মিথ্যা তথ্য প্রচারের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ তথা বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট করার পাশাপাশি বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি, নারায়ণগঞ্জ- ৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমানকে অসম্মান ও খাটো করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। পাগলা উচ্চ বিদ্যালয় নিয়ে কুচক্রী মহলের উদ্দেশ্য প্রনোদিত এই মিথ্যা অপপ্রচার বন্ধে সাংসদ শামীম ওসমানসহ শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করেন রেজাউল করিম।
সাংবাদিক সম্মেলনে বিদ্যালয়ের আয় ব্যায়, উন্নয়ন এবং ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন রেজাউল করিম। এই বিদ্যালয়ের বাৎসরিক আয় দুই কোটি বিরানব্বই লক্ষ বিশ হাজার (২,৯২,২০,০০০) টাকা বলে জাহের মোল্লার দেয়া তথ্যটি সম্পুর্ন মিথ্যা দাবী করে রেজাউল করিম বলেন, ২০২০ সালে স্কুলের মোট আয় ছিলো ১,৫৫,৪২,৬৮০ টাকা, ব্যায় ছিলো ১,৫২,৮৪,৭৮০ টাকা। ২০২১ সালে বাৎসরিক আয় ছিলো ১,৪৫,২৭,৮০০ টাকা আর ব্যায় ছিলো ১,৫৬,৩৯,০৩৬ টাকা। এবছর অর্থাৎ ২০২২ সালেও শিক্ষক- কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য ব্যায়ের পরেও প্রায় ২০ লাখ টাকার মতো ঘাটতি পড়বে। কিন্তু জাহের মোল্লার দেয়া হিসাবমতে সমস্ত ব্যায়ের পরে প্রায় ১ কোটি টাকা টাকা বিদ্যালয় কোষাগারে উদ্বৃত্ত থাকবে। যা সম্পুর্ন মিথ্যা, বানোয়াট এবং বিভ্রান্তিমুলক।
পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের অভিভাবকদের আর্থিক সঙ্গতি সম্পর্কে রেজাউল করিম বলেন, পাগলা এলাকাটি একটি শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকা, নিম্ন ও স্বল্প আয়ের মানুষের বসবাস এখানে। তাই প্রায় শিক্ষার্থীরাই পুর্ন বেতন, সেশন চার্জ দিতে ব্যর্থ হয়। দরিদ্র, অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের বেতন, সেশন চার্জ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি এবং প্রধান শিক্ষক প্রায়ই মওকুপ অথবা অর্ধ মওকুপ করে থাকে। এজন্য বিদ্যালয় কাঙ্ক্ষিত আয় অর্জন করতে ব্যর্থ হয়, ব্যায় মিটাতে হিমসিম খেতে হয় পরিচালনা কমিটিকে।
এডহক কমিটির সভাপতি সাংসদ শামীম ওসমান অত্যন্ত ব্যস্ত থাকায় পরিচালনা পর্ষদের মুল দায়িত্বে থাকা এই অভিভাবক সদস্য দায়িত্ব পালন কালে স্কুলের জন্য খরচ করা প্রত্যেকটি ব্যয়ের ভাউচার দেখিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বিদ্যালয়ের আয় ব্যায়ের হিসাবে একটি টাকার গড়মিল দেখাতে পারলে এর দায়ভার নিজের মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করবো। ছাত্র ছাত্রী বৃদ্ধি, শিক্ষার মানোন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষক-কর্মচারীদের সুযোগ সুবিধা দিতে পাগলা উচ্চ বিদ্যালয় অত্যন্ত সুন্দরভাবে সক্ষম হওয়ায় বিদ্যালয়টি এবং এর প্রধান শিক্ষক বেশ কয়েকবার নারায়ণগঞ্জ জেলা তথা বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষকের মর্যাদা লাভ করেছেন। এই অর্জনে ঈর্ষান্বিত হয়ে জাহের মোল্লাসহ একটি কুচক্রী মহল প্রায়ই বিদ্যালয় নিয়ে প্রপাগাণ্ডা ছড়ায় যা শিক্ষক, অভিভাবক, ছাত্র ছাত্রী এবং এলাকাবাসীকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দেয়। এধরণের মিথ্যা ও কাল্পনিক তথ্য প্রচারে বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি সাংসদ শামীম ওসমানের সুনামকে ক্ষুন্ন করে।
বর্তমান এডহক কমিটিতে স্থান না পাওয়া জাহের মোল্লাকে উদ্দেশ্য করে রেজাউল করিম বলেন, শিক্ষা বিভাগ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যখন নির্বাচনের তফসিল দিবেন তখন পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে জয়লাভ করে পরিচালনা পর্ষদে আসেন, দেখেন, কাজ করেন। দূর থেকে কাল্পনিক তথ্য দিয়েন না। বর্তমান এডহক কমিটির মেয়াদ সেপ্টেম্বর’২০২২ পর্যন্ত আছে। তাই যে পর্যন্ত দায়িত্বে আছি, দুর্নীতিমুক্ত থেকে শিক্ষা বিস্তারে কাজ করতে চাই। বিদ্যালয় নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রদানকারীরা প্রচার বন্ধ না করলে সাংসদ শামীম ওসমানের পরামর্শানুযায়ী ব্যবস্থা করবো।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ব্রোজেন্দ্র নাথ সরকার সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ের নারায়ণগঞ্জ সদরের একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার চলমান ধারা অব্যাহত রাখতে জাহের মোল্লাসহ সকলকে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমুলক তথ্য প্রচার বন্ধ করার আহবান জানাই।
সাংবাদিক সম্মেলন চলাকালে শত শত অভিভাবক, এলাকবাসী, ছাত্র ছাত্রীরা বর্তমান এডহক কমিটির পক্ষ নিয়ে বিদ্যালয় মাঠে অবস্থান নেন। এসময় অভিভাবকরা পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়ন ও গরীব শিক্ষার্থীদের সহায়তায় বর্তমান এডহক কমিটির বিভিন্ন অবদানের কথা সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন।
Leave a Reply