ইচ্ছে না থাকলেও কথাতো বলতেই হবে। একটি সভ্য দেশে যখন অসভ্যতার মহা-মহোৎসব চলে তখন দেশবাসী তথা জনগণের কিছুনা কিছু কথাতো বলতেই হয়। খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে বলবো কী বলবোনা বলার কোনো সুযোগ নেই। গেলো ৬ অক্টোবর মঙ্গলবার দেশব্যাপি নারী নির্যাতন বিরোধি বিক্ষোভ ও সমাবেশ দেখে এমনটাই মনে হয়েছে। যে বিক্ষোভ সমাবেশ ৯ অক্টোবরও অব্যাহত ছিলো। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, যে দেশে ‘আয়-বরকতের’ জোঁয়ার বইছে সে দেশে ছাত্র নামধারি গুন্ডা-পান্ডারা স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে দল বেঁধে ধর্ষণ করে কী ভাবে ! ঘটনাটি ছিলো সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের। তার রেশ কাটতে না কাটতেই উঠে আসে নোয়াখালি বেগমগঞ্জের এক অসহায় নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের করুণ কাহিনী। যে বর্বরতার দৃশ্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় ঘটনার মাসাধিকাল পর। আর এ নিয়েই দেশব্যাপি চলছে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষজন সহ সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের মানবন্ধন এবং বিক্ষোভ সমাবেশ। দুঃখজনক হলেও সত্যি সে সমাবেশে বিনা উস্কানিতেই দেশের জনবান্ধব পুলিশ লাঠিপেটা করেছেন ! ঠিক একই ঘটনা সংঘটিত হয়েছে সিলেট মৌলুভী বাজারেও। ৮ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সেখানেও একদল সন্ত্রাসী শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে অতর্কিত হামলা চালিয়ে সব লন্ডভন্ড করে দেয়। তাই নিন্দুকেরা বলেন, ভাইয়েরা ‘ভাত দেওনের মুরোদ না থাকলেও কিল দেওনের গোসাই !
এখন আমার বয়স তিন কুড়ি দশ বছর। বলতে গেলে অনেকটা লম্বাপথ অতিক্রম করে এসেছি। কিন্তু একাত্তরের যুদ্ধছাড়া পাকিস্তান শাসনামলেও এমন বর্বরতা ও ধর্ষণ মহামারি কখনো দেখিনি। অথচ, স্বাধীনতার ৫০ বছর পালিত হবার আগেই ‘আমাদেরকে তাহাই দেখিতে হইতেছে’ ! সামনে হয়তো তারও চেয়ে আরো বড় কিছু দেখতে হবে। সব মিলিয়ে বলতেই হয়, অবক্ষয় আর কাকে বলে। সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে ৯ মাসে ৯৭৫ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। সারা দেশে প্রতিদিন গড়ে তিন কী চারজন করে নারী ধর্ষিত হচ্ছে। সে সাথে খুন ও আত্মহত্যাতো আছেই। না, শুধু নারীই নয়। ছেলে শিশু ও কিশোরাও নানা স্থানে বলৎকারের শিকার হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, আসছে দিনগুলোতে দেশের বেওয়ারিশ কুকুর গুলোও নিরাপদ নয়। একদিন হয়তো ধর্ষণের হাত থেকে নেংটা কুকুর গুলোও রেহাই পাবেনা। এ যদি হয় একটি সভ্য দেশের প্রকৃত অবস্থা তা‘হলে আমরা ১৮ কোটি মানুষ কোথায় কোন দেশে যাবো। যে ধর্ষন মহামারিতে খোদ জাতিসংঘও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ লজ্জা আমরা রাখবো কোথায় ? বিজ্ঞরা বড় গলাতেই বলেন, নুন্যতম লজ্জা শরম থাকলে এমতোবন্তায় রাজনৈতিক মাঠের কেউ ‘গাঁয়ে মানেনা নিজে মোড়ল হয়ে’ দামি সুগন্ধি কিংবা ফারফিউম মেখে পথেঘাটে সস্তা চাপাবাজি করতে পারতো না। যারা এমন কাজটি করছেন শেষেএসে তারাই হয়তো একদিন দেশটিকে ডুবাবেন। কোনো ঠেলা-ধাক্কার প্রয়োজন হবেনা ?
কী জানি বলছিলাম। হ্যাঁ, ওই বেগমগঞ্জের বিবস্ত্র ও নির্যাতিত নারীকে নিয়েই কথা হচ্ছিলো। যে নারীকে বার কয়েক ধর্ষণ সহ বিবস্ত্র করে সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করেছে ওই এলাকার ত্রাস ও বদমাশ দেলোয়ার ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। যাদের কাছে গোটা এলাকাবাসীই জিম্মি। এমন কী সংশ্লিষ্ট এমপি ও অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরাও নাকি ওইসব ত্রাস বাহিনীর কাছে কোনো পাত্তা পাননা। ফলে, এরা পাচ্ছে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের নানা আশ্রয় পশ্রয়। রয়েছে পুলিশের সাহায্য সহযোগিতা। তবে, মজার ব্যাপার হলো এতো বড় একটি ঘটনা ওটা নাকি নোয়াখালি জেলা পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন ও বেগমগঞ্জ থানা ওসি মোটেও জানেন না। বিষয়টি ভাইরাল হওয়ার পর দেশবাসীর মতো তারাও শুনেছেন। মিডিয়ায় এসপি আলমগীর বলেন, আমাদের কাছে এ বিষয়ে কেউ নোটিস করেননি। তাই জানতে পারিনি । ভালো কথা, সুন্দর কথা, বড়ই চমৎকার কথা। একজন পুলিশকর্তার মতো কথাই বটে ! যে কথা কখনো কোনোদিনও দেশের জনগণের কাছে ধুপে টিকবেনা। বিজ্ঞ মতে, যে পুলিশ দিনকে রাত ও রাতকে দিন করতে পারেন অথচ, এ খবরটিই তারা পাননি। তা‘হলে কী সত্যি সত্যি জনগণের বুঝে নিতে হবে সে সময় তাদের পালিত সোর্সরা বসে বসে বন্যার পানিতে মরা মাছ শিকার কিংবা পদ্মা মেঘনা ও যমুনার ঢেউ গুণছিলেন। এতে পরিস্কার, পুলিশ জনগণকে হয়তো কুলুর বলদ বলেই মনে করেন ?
পাদটিকা: নারী নির্যাতন বিরোধি সমাবেশ থেকে দাবি উঠেছে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ড করতে হবে। এ নিয়ে সরকারও চিন্তাভাবনা করছেন। এখন কথা হলো, যেখানে আইনের শাসন নেই বলে কারো কারো মন্তব্য রয়েছে সেখানে মৃত্যুদন্ড আইন পাশ করা হলে হালে কতোটা পানি পাবে। বছরের পর বছর ধরে বিচারিক কার্যক্রমই যদি ঝুলে থাকে তা‘হলে মৃত্যুদন্ড আইনকেতো যুগযোগান্তর হিম ঘরেই পড়ে থাকতে হবে। দেশে যে বিদ্যমান আইন রয়েছে যথাসময় বিচার ও রায় হলে সে আইনেইতো যথেষ্ঠ সাজা রয়েছে। তাই, আগে বিচার ও রায় হোক তার পরতো উঠবে দন্ডের কথা। আবার দন্ড পেলেই হবেনা, ওই রায় কার্যকর করার জন্যে বছরের পর বছর পাড় করতে হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। মনে করুন, ধর্ষণ মামলার রায়ে কোনো আসামিকে মৃত্যুদন্ডই দেয়া হলো। এখন আসামির সামনে থেকে যাচ্ছে উচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ। সর্বোচ্চ আদালতেও যদি নিম্ন আদালতের রায় পুণঃবহাল থাকে তারপর আসামির জন্যে আরো একটি শেষ অপশন আছে। আর সেটি হলো মার্সিপিটিশনের মাধ্যমে মহামান্য রাষ্ট্র্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়া। সেখানে গিয়ে যদি আসামি মুক্তি পেয়ে যান তারপর আর কারো কিছুই করার নেই ! অসমর্থিত সূত্রের দাবি, এমন নজির নাকি রয়েছে ? মতামত লেখকের নিজস্ব। (লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট)।
Leave a Reply